বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা পৃথিবীর প্রায় ২.৭% মানুষ অঙ্গহানি সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন জন্মগত ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রচুর মানুষের অঙ্গহানি ঘটে। পঙ্গু হাসপাতালসহ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এদের চিকিৎসা দেয়া হলেও হানিত অঙ্গটি তাকে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না, যার ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে কমে চলেছে। শুধুমাত্র ঢাকা অঞ্চলে এই রকম পঙ্গু ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। গুঁটি কয়েক ব্যক্তি অনেক টাকা খরচ করে উন্নত দেশগুলো থেকে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে আনছে, কিন্তু তাতেও অনেক সময় দেরী হয়। সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের সহায়তায় কয়েকজন ব্যক্তি উদ্ভাবক মিলে সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে একটি অত্যাধুনিক থ্রি ডি প্রিন্টার তৈরি করেছে যা ব্যাবহার করে মানুষের কৃত্রিম হাত ও পা তৈরি করে তা মানব শরীরে সংযোজন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অঙ্গহানি যেমন সমস্যা, অন্যদিকে আমাদের দেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অনেক পিছিয়ে। তাই কৃত্রিম হাত ও পায়ের সমস্ত কিছু মূলত আমরা সরাসরি বিদেশ থেকে কিনে এনে থাকি। কিন্তু এই সেবাটি দেওয়ার জন্য আমরা নিজেরা চাইলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি।
সমন্বিত আত্ম-নির্ভরশীল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র তৈরি বাংলাদেশের প্রথম 3D printer এর মাধ্যমে কৃত্রিম হাত-পা তৈরি এই উদ্যোগ। 3D printer দিয়ে যেকোনো 3D model করা বস্তু যেমন বল, খেলনা, বোতল ইত্যাদি প্লাস্টিক filament (তার) দিয়ে বাস্তবে বানানো হয়ে থাকে। যদি হাত ও পা এর model করতে পারি তাহলে সেটি 3D printer দিয়ে প্রিন্ট দিয়ে তারপর মানুষের শরীরের সাথে সংযুক্ত করা যেতে পারে। পঙ্গু ব্যক্তির শরীরের মাপ নিয়ে তার জন্যে সঠিক মাপের অঙ্গ তৈরি করা সম্ভব হবে অনেক কম সময়ে এবং কম খরচে। এছাড়াও মোট ৩৬ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম বস্তুর প্রটোটাইপ সংস্করণ তৈরি করা যায়। পরবর্তীতে পঙ্গু হাসপাতালগুলোতে কমপক্ষে একটি করে থ্রি ডি প্রিন্টার স্থাপন করা সম্ভব। ব্যয়বহুল ছাঁচ তৈরির প্রযুক্তি থেকে দ্রুত প্রটোটাইপ তৈরী প্রযুক্তি ব্যবহার হবার কারণে কৃত্রিম অঙ্গের দাম সবার হাতের নাগালে থাকবে। উল্লেখ্য, হাত এবং পা’কে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য অন্য আরও বেশকিছু জিনিস বানানোর উদ্যোগ পরবর্তীতে নিতে হবে।