প্রকল্প সমূহ

বস্ত্র পরিদপ্তরের ই-সেবা
প্রযুক্তি হাতে জয়িতা

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ক্ষুদে বার্তাভিত্তিক সার্টিফিকেট গ্রহণপূর্বক বিবাহ নিবন্ধন


‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইন্সটিটিউটের(আইএফপিআরআই) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সালে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার শতকরা ৫ দশমিক ৪ ভাগ, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের বিয়ের হার ৩৭ দশমিক ৮ ভাগ৷ সব মিলিয়ে বাল্য বিবাহের হার শতকরা ৪৩ দশমিক ২ ভাগ৷ এমন হারের বাল্যবিবাহ নিরোধের জন্য জন্ম নিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বয়স নির্ধারিত হওয়া দরকার। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাল্যবিবাহ কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেই লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তাভিত্তিক সার্টিফিকেট গ্রহণপূর্বক বিবাহ নিবন্ধন প্রকল্প’। যার আংশিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এ টু আই-এর সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড থেকে।

চিহ্নিত সমস্যা এবং প্রস্তাবিত সমাধান

বিবাহ নিবন্ধনে পদ্ধতিগত দুর্বলতা থাকায় বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা বাল্যবিবাহ বন্ধ হচ্ছে না। বয়স প্রমানের উপযুক্ত দলিল/ প্রমানপত্র হাতের কাছে না থাকার অজুহাত, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিবাহ নিবন্ধকবৃন্দকে বিবাহ নিবন্ধনে চাপ প্রয়োগ, বিবাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গুটিকয়েক বিবাহ নিবন্ধকের নীতি বিবর্জিত কৌশলের প্রয়োগ, বিবাহ নিবন্ধন কাজে অবৈধ সাব-কাজীর ব্যবহার, বিবাহ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের উপযুক্ত ও অথেনটিকেট তথ্য ভান্ডার না থাকা এবং বিবাহ নিবন্ধকবৃন্দের কার্যক্রমের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে এটা হচ্ছে।

সরকার দেশব্যাপী অনলাইন জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করায় দেশের সকল নাগরিকের জন্ম সর্ম্পকিত তথ্য জাতীয় পর্যায়ে ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উক্ত অথেনটিকেট তথ্য ব্যবহারে বিবাহ নিবন্ধকবৃন্দকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় মোবাইল ফোনের ইউএসএসডি কোড সিস্টেম (উদাহরণস্বরূপ গ্রামীণ ফোনে *৫৬৬#, বাংলালিংকে *১২৪# ডায়াল করলে, গ্রামীণ ফোনের / বাংলালিংকের সার্ভার থেকে একাউন্ট ব্যালান্স জানা যায়) ভিত্তিক এসএমএস সার্ভিস প্রদান করা হবে। মোবাইল ফোন নির্ভর সিস্টেমটিতে সরকার নিযুক্ত বিবাহ নিবন্ধকের আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড যুক্ত রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের জন্য একটি ওয়েবসাইট www.stopchildmarriagekurigram.gov.bd আছে। ওয়েবসাইটটিতেও (www.stopchildmarriagekurigram.gov.bd) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যবহৃত ও সৃষ্ট তথ্যসমূহের ব্যাকেন সুবিধাসহ (তথ্য স্টোর হাউস) প্রত্যেক বিবাহ নিবন্ধকদের জন্য আলাদা ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড রয়েছে। ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে বিবাহ নিবন্ধকবৃন্দ এই মোবাইল ফোনের সিস্টেমটিতে বা এই সাইটের ডাটা সেন্টারে ডাটা ইনপুট দেবার অথরিটি পাবেন। মোবাইল ফোনের *১৬১০০# USSD কোড ডায়াল করে তাঁকে শুধু বর-কনের জন্ম নিবন্ধন নম্বর/জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর/ পাস করা পাবলিক পরীক্ষার ( এসএসসি/ জেএসসি বা সমমান ) রোল নম্বর প্রবেশ করাতে হবে। বর্ণিত নম্বর সমূহের প্রযোজ্য যেকোন নম্বর মোবাইল ফোনের ইউএসএসডি মেনু বা পূর্বউল্লেখিত সাইটটির নির্ধারিত মেনুর মাধ্যমে প্রবেশ করানো মাত্র জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচয়পত্র/শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের ডাটা সেন্টারের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে এবং বর- কনের পিতা/মাতার নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ প্রদর্শিত হবে। যে তারিখে বিবাহ নিবন্ধনের কার্যক্রমের জন্য এই ডাটা এন্ট্রি করা হবে সেই তারিখের সাথে জন্ম তারিখের মধ্যে ক্যালকুলেশন হয়ে কনের ক্ষেত্রে ১৮ এবং বরের ক্ষেত্রে ২১ বছর না হলে এই বিবাহ নিবন্ধন সংক্রান্ত ডাটা এন্ট্রির সিস্টেমটি, সার্টিফিকেট তৈরির পরবর্তী পদক্ষেপে আর অগ্রায়ন করতে দেবেনা । আর বর-কনের বয়স আইনে নির্ধারিত বয়স অনুযায়ী হলে, পরবর্তী ধাপে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পাদন করা যাবে। উক্ত সিস্টেমে বিবাহ নিবন্ধক কর্তৃক সম্মতি প্রদান শেষে একটি আইডি/ট্র্যাকিং নম্বর সম্বলিত অটোমেটেড ভার্চুয়াল সার্টিফিকেট তৈরি হবে। সম্পাদিত রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্য ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর বর-কণের প্রত্যেকের একজন করে অভিভাবকের মোবিাইল নম্বরে প্রেরণ করা হবে । এটি একটি অটো জেনারেটেড কর্তৃত্ব প্রদান সম্বলিত সার্টিফিকেট যেখানে, (নির্দিষ্ট ইউজারনেম ধারী) বিবাহ নিবন্ধক, সংশ্লিষ্ট (বর-কনের নাম ও জন্ম নিবন্ধন নম্বর উলেøখ থাকবে) বর-কনের বিবাহ নিবন্ধন করতে পারবেন বলে উল্লেখ থাকবে। সংক্ষিপ্ত ভার্চুয়াল এই সার্টিফিকেটে একটি ট্র্র্যাকিং আইডি এবং সার্টিফিকেট জেনারেশন এর সময় উল্লেখিত থাকবে। সার্টিফিকেটটির ট্র্যাকিং আইডি নম্বরটি নিকাহ নিবন্ধন এর সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠায় পরবর্তীতে মনিটরিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের জন্য সংযুক্ত রাখতে হবে । বর-কনের বিবাহ সংক্রান্ত ডাটা একবার এন্ট্রি নিশ্চিতকরণ হয়ে গেলে (সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেলে) পরবর্তীতে অন্য কোথাও এই বর বা কনের জন্ম নিবন্ধন নম্বর বিবাহ রেজিস্ট্রেশন এর নিমিত্ত এই সফটওয়্যার এ এন্ট্রি করলে তার পূর্ব বিবাহ সম্পর্কিত তথ্য প্রদর্শন করবে । ইনফো সাইটে নির্দিষ্ট ইউজারনেম ধারী বিবাহ নিবন্ধক সংশ্লিষ্ট পেজে গিয়ে পূর্বে তৈরীকৃত ট্র্যাকিং নম্বর প্রবেশ করিয়ে বিবাহ সার্টিফিকেট জেনারেট করতে পারবেন এবং প্রিন্ট আউট বের করে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে গ্রহীতাকে প্রদান করতে পারবেন। এভাবে তথ্য প্রাপ্তির পথ করে দিতে পারলে বাল্যবিবাহ অনেকখানিক কমিয়ে আনা সম্ভব। কুড়িগ্রাম জেলা থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ একইভাবে অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।